1. admin@banglarsangbadprotidin.com : admin :
  2. banglarsangbadprotidin@gmail.com : banglar sangbad : banglar sangbad
১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ২৯শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| হেমন্তকাল| শুক্রবার| বিকাল ৩:০৮|

‘লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ সংরক্ষণে উদ্যোগ

রিপোর্টার নাম:
  • আপডেট সময় : রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫
  • ১৫৩ বার পড়া হয়েছে

ছবুর হোসেন, বরিশাল//

বরিশালের ঐতিহ্যবাহী ‘লাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ অবশেষে সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ধ্বংসপ্রায় বিশালাকায় প্রাসাদটিকে আদিরূপ দেওয়াসহ ইতিহাস এবং ঐতিহ্য ধরে রাখতে সংস্কার কাজ শুরু করেছে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। প্রাথমিকভাবে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪০০ বছরের পুরানো এই ভবনের ভিত্তি, ইটের গাঁথুনি ও ছাদ নির্মাণ করা হবে। তবে প্রাচীন দরজা-জানালা, মেঝে এবং আলো-বাতাস চলাচলের কাঠামো আপাতত এই প্রকল্প না থাকলেও পরবর্তী ধাপে যুক্ত করা হতে পারে। সরকারের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জমিদারের উত্তরসূরিসহ বরিশালবাসী।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ সফিউর রহমানকে এক চিঠিতে জমিদারবাড়ির পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানান অস্ট্রেলিয়ার উচ্চ আদালতের সলিসিটার ও জমিদার পরিবারের উত্তরাধিকারী পঙ্কজ রায় চৌধুরীর কন্যা আলপনা রায়। চিঠিতে তিনি ভবনটিকে একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণের জোর দাবি রাখেন। তার ওই চিঠির ভিত্তিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বরিশাল জাদুঘরকে প্রস্তাব তৈরির নির্দেশ দিলেও দীর্ঘদিনে বাড়িটি সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয় হয়নি। বরং জমিদারবাড়ির অভ্যন্তরে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসির) বিশালাকায় দুটি গুদাম ও স্থাপনা নির্মাণ করে, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

তবে জমিদারবাড়ি সংরক্ষণে উদ্যোগ কিছুটা বিলম্বে হলেও জমিদার পরিবারের উত্তরাধিকারী অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী আলপনা রায় ভিষণ খুশি হয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘বাড়ি সংরক্ষণে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছিল। ওই সময় সরকারের তরফ থেকে উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরে সংস্কারে কোনো প্রচেষ্টা লক্ষ্যণীয় ছিল না। এখন সংরক্ষণে কাজ শুরু হয়েছে, যা শুনে ভালা লাগছে এবং তার জন্য সরকার প্রশংসার দাবিও রাখে।

বরিশাল জাদুঘর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত ৪ মে থেকে বাবুগঞ্জ উপজেলার লাকুটিয়ায় অবস্থিত জমিদারবাড়ির সংরক্ষণে কাজ চলছে।

দোতলা ভবনটির চারপাশে নির্মাণ করা হচ্ছে গোলাকার ইটের পিলার। ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে পুরোনো ছাদ, সাতক্ষীরা থেকে আনা টালি দিয়ে নতুন ছাদ নির্মাণ করা হবে।

এই তথ্য নিশ্চিত করে বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরের সহকারী কাস্টেডিয়ান আরিফুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে মূলত ভবনের ভিত্তি, ইটের গাঁথুনি ও ছাদ নির্মাণের কাজ হচ্ছে। তবে প্রাচীন দরজা-জানালা, মেঝে এবং আলো-বাতাস চলাচলের কাঠামো আপাতত এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও পরবর্তী ধাপে যুক্ত করা হবে।

জানা গেছে, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ‘পুরোনো ছবি ও ঐতিহাসিক বর্ণনার ভিত্তিতে ভবনটিকে তার প্রকৃত রূপে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। এই তথ্য নিশ্চিত করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক লাভলী ইয়াসমিন জানান, জমিদারবাড়ির উচ্চতা ৮ দশমিক ২০ মিটার, দৈর্ঘ্য ২৫ দশমিক ৪০ মিটার ও প্রস্থ ৯ দশমিক ২০ মিটার। দোতলা ভবনটিতে আছে মোট ৯টি কক্ষ। জমিদারবাড়িটির চারপাশে আছে তিনটি বাঁধানো পুকুর, যেগুলো ‘বাবুবাড়ি পুকুর’ নামে পরিচিত।

ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রাপ্ত, জমিদার রূপচন্দ্র রায় ছিলেন লাকুটিয়া জমিদার পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তার নাতি রাজচন্দ্র রায়ের সময় জমিদারির পরিধি ও প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়। আনুমানিক ১৬০০ কিংবা ১৭০০ সালে তিনি প্রায় ৪৯ দশমিক ৫০ একর জমির ওপর মূল জমিদারবাড়িটি নির্মাণ করেন। প্রজাদরদি হিসেবে খ্যাত রূপচন্দ্র রায়ের আমলেই লাকুটিয়া থেকে বরিশাল পর্যন্ত সড়ক নির্মিত হয়। রূপচন্দ্রের দুই ছেলে রাখালচন্দ্র রায় ও প্যারীলাল রায় ছিলেন ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী। প্যারীলাল রায় ছিলেন একজন বিশিষ্ট ব্যারিস্টার ও সমাজসেবক, তাঁর দুই পুত্র বিখ্যাত বৈমানিক ইন্দ্রলাল রায় এবং নামকরা বক্সার পরেশলাল রায় তাঁদের কীর্তির ইতিহাস সুদীর্ঘ। এই জমিদার পরিবারের সঙ্গে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। কবিগুরুর বড় ভাই বিখ্যাত চিত্রশিল্পী দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই পুত্র অরুণেন্দ্রনাথ ও দীপেন্দ্রনাথ বিয়ে করেন রাজচন্দ্র রায়ের দুই নাতনি সুশীলা এবং চারুবালাকে। পরবর্তী সময়ে জমিদার দেবেন লাল রায় চৌধুরী ভারতে থিতু হন এবং কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মেয়ে মন্দিরা রায় চৌধুরীর বিয়ে হয় বরিশালের কাশীপুরের মুখার্জি পরিবারে।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, জনদরদি জমিদারবংশের উদ্যোগেই রাজচন্দ্র কলেজ এবং পুষ্পরাণী চৌধুরী ইনস্টিটিউশন (পিআরসি স্কুল) প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজটি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলেও স্কুলটি সক্রিয় আছে, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। এখন নতুন করে জমিদারের ঐতিহ্য রক্ষায় সরকার উদ্যোগ নেওয়া লাকুটিয়া গ্রামের মানুষও সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

বরিশাল জেলা প্রশাসনের অর্পিত সম্পত্তিবিষয়ক কৌশলি সুভাষ চন্দ্র দাস সাংবাদিকদের জানান, সরকার ইতিমধ্যে জমিদারবাড়ির সীমানাভুক্ত প্রায় আট একর জমি এবং একটি বড় পুকুরের মালিকানা পেয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে উদ্যোগও গ্রহণ করেছে। এই কর্মযজ্ঞ শেষ হলে ধ্বংসপ্রায় জমিদার রূপচন্দ্র রায়ের বাড়িটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নেবে।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ
© All rights reserved © 2014 banglarsangbadprotidin.com