
ছবুর হোসেন, বরিশাল//
আসনের চেয়ে পাস করা শিক্ষার্থী সংখ্যা কম। যারা পাস করেছেন তারাও স্বভাবতই সরকারি ও খ্যাতনামা কলেজগুলোতেই ভর্তি হতে ছুটবেন। বিষয়টি বুঝেই একাদশে শিক্ষার্থী টানতে কিছু কৌশল নিয়েছিল বরিশালে বেসরকারি ও ননএমপিও কলেজগুলো। অভিভাবক ও ভর্তিচ্ছুদের কাছে দফায় দফায় ফোন করা হয়েছে কলেজগুলোর পক্ষ থেকে। কোথাও কোথাও শিক্ষকরা বাড়ি বাড়িও ঢুঁ মেরেছেন। কিন্তু তারপরও কঙ্খিত শিক্ষার্থী না পাওয়া কলেজগুলোর কর্তৃপক্ষ চরম হতাশ হয়ে পড়েছে। কোনো শিক্ষার্থী না পাওয়া কিছু ‘হুদাই’ কলেজেরও খোঁজ মিলেছে বরিশালে।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের তথ্য সূত্র জানান, বোর্ডের আওতাধীন কলেজগুলোতে মোট আসন আছে ১ লাখ ১০ হাজার। আর চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় মোট পাস করেছে মাত্র ৪৬ হাজার ৭৫৮। এই সংখ্যা বিদ্যমান আসনের প্রায় অর্ধেক। তাদের মধ্যে আবার ভর্তির জন্য সাড়ে ৩৫ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। অবশিষ্ট ১১ হাজারকে ভর্তি করাতে কলেজগুলো উঠেপড়ে লেগেছে।
শিক্ষাবোর্ড সূত্র বলছে, নিজস্ব ক্যাম্পাস ও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় অনেক বেসরকারি কলেজে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে চান না। তদন্ত করে এসব কলেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, বিগত বছর গুলোতে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার ৮০ শতাংশের উপর থাকলেও এবার তা নেমেছে ৫৬ দশমিক ৩৮ শতাংশে। ফলে ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীও কমেছে। ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অনগ্রসর কলেজগুলো।
অমৃত লাল দে মহাবিদ্যালয় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো: মাহবুবুল হক জানান, তার কলেজে ভর্তির জন্য কোটা অনুযায়ী বরাদ্ধ আছে সাড়ে ৯০০ সিট। এ বছর ভর্তির জন্য ৬শ আবেদন পড়েছে। কলেজটিতে লেখাপড়ার মান ভালো হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয় বলে দাবি করেন তিনি।
বেগম তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোকলেছুর রহমান জানান, তার কলেজে আসন আছে ৪০০। এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ২৪৭ জন শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল কালেক্টরেট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এ করিম আইডিয়াল কলেজ, কাশিপুর গার্লস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাশিপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আগরপুর কলেজ, হাজী সৈয়দ বদরুল হোসেন কলেজ, মহানগর কলেজ, আরিফ মাহমুদ ডিগ্রি কলেজ, আনছার উদ্দিন মল্লিক কলেজ, রূপাতলী জাগুয়া কলেজ, চন্দ্রদ্বীপ কলেজ, কবাই ইউনিয়ন আইডিয়াল মহিলা কলেজ, বঙ্গবন্ধু সংগীত কলেজ, আব্দুল জব্বার মেহমান কলেজ কাঙ্খিত শিক্ষার্থী পায়নি।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী জানান, বিগত বছরগুলোতে অধিকাংশ কলেজে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভর্তি করানো হতো শিক্ষার্থী। তবে এই বছর অনলাইনে ভর্তি হতে হয়েছে। ভালো কলেজগুলোতে বেশী শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চাইলেও নির্দিষ্ট আসনের বাইরে ভর্তির সুযোগ নেই। আবার যেগুলোতে পরিবেশ নেই সেসবে সবাই ভর্তিও হতে চায় না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারাদেশে এমন অন্তত ২৪৩টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও সমমানের প্রতিষ্ঠানে কাম্যসংখ্যক শিক্ষার্থী নেই। এসব কলেজে শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে চলছে শিক্ষা ব্যবসা, কোচিং, নোট-গাইড ও নিয়োগ বাণিজ্য এবং অবৈধ এমপিওভুক্তি।