1. admin@banglarsangbadprotidin.com : admin :
  2. banglarsangbadprotidin@gmail.com : banglar sangbad : banglar sangbad
১১ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ২৬শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| হেমন্তকাল| মঙ্গলবার| বিকাল ৪:২৫|

ব্রাজিল ৪, আর্জেন্টিনা ০ ক্লাব বিশ্বকাপে

রিপোর্টার নাম:
  • আপডেট সময় : বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন, ২০২৫
  • ২২০ বার পড়া হয়েছে

স্পোর্টস ডেস্ক//

সিয়াটলের লুমেন ফিল্ডে তখন খেলার ঘড়িতে ৯৩ মিনিট। গ্যালারির দিকে তাকিয়ে এক ইতালিয়ান সাংবাদিক খেলার চেয়ে বেশি মন দিচ্ছিলেন রিভারপ্লেট সমর্থকদের দিকে।

স্কোরবোর্ডে রিভার তখন ২-০ গোলে পিছিয়ে, বিদায় নিশ্চিত। কিন্তু গ্যালারির সেই সমর্থকদের দেখে বোঝার উপায় নেই—তাদের যেন হারজিতের কোনো বালাই নেই। তারা একসুরে গাইছিলেন, ভালোবাসার গান।

সাংবাদিক মাথা নেড়ে বললেন, “বেলিস্মা, মেরাভিলিওসো (অপরূপ, অসাধারণ)। এ রকম দৃশ্য আমি কখনও দেখিনি। ”

কিন্তু ঠিক তখনই সব বদলে গেল। অলৌকিক প্রত্যাবর্তনের আশাকে একপাশে রেখে রিভার খেলোয়াড়রা যেন রণংদেহি হয়ে উঠল। মাঠে শুরু হলো বিশৃঙ্খলা। গঞ্জালো মোন্তিয়েল লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে গেলেন, যদিও তার মতো আরও কয়েকজনের একই দশা হতে পারত।

ম্যাচ শেষে তো রীতিমতো ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার দৃশ্য! মার্কোস আকুনা নেদারল্যান্ডসের ডেনজেল ডামফ্রিসকে অনুসরণ করলেন ড্রেসিংরুম পর্যন্ত।

এমন ম্যাচকে কি বলা যায় সুন্দর? মোটেও না। বরং এটা ছিল বিশ্রী, বিব্রতকর এক পরিণতি। শুধু রিভারের জন্য নয়, গোটা আর্জেন্টিনার ক্লাব ফুটবলের একটা প্রতীকী ব্যর্থতা যেন এই বিদায়।

দেখা গেছে, মাঠে তারা যতটা নিষ্প্রভ, গ্যালারিতে ততটাই বিস্ফোরক। রিভার-বোকা দুই দলই মাঠে বড়জোর কিছু মুহূর্তে ভালো খেলেছ, বাকি সময় যেন ফুটবল নয়, কেবল প্রাণহীন লড়াই।

তবে এমন নয় যে এ টুর্নামেন্টে রঙ ছিল না। বিশেষ করে, বোকা জুনিয়র্সের সমর্থকেরা শুরুতেই প্রাণ ঢেলে দিয়েছিল আয়োজনে। অনেকে যারা ক্লাব বিশ্বকাপকে কিছুটা তাচ্ছিল্য করছিলেন, তারাও বোকা-সমর্থকদের উন্মাদনায় মুগ্ধ হয়েছেন।

রিভারের সমর্থকেরাও পিছিয়ে ছিল না। লস অ্যাঞ্জেলেসে তাদের উপস্থিতি কিছুটা কম চোখে পড়লেও সিয়াটলে তারা রীতিমতো তীর্থযাত্রায় এসেছেন যেন। লাল-সাদা পতাকায় ছেয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, হোটেল, রেস্তোরাঁ—সিয়াটলের ফুটবল-আবহ যেন একেবারে বদলে দিয়েছিল তারা।

খেলার আগে রিভারের হাতে সুযোগ ছিল। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে হলে জিততে হতো, আর প্রতিদ্বন্দ্বী বোকা এরই মধ্যে বিদায় নিয়েছে, সেটাও ছিল বাড়তি প্রেরণা। বোকা তো এমনকি অকল্যান্ড সিটির অর্ধপেশাদার খেলোয়াড়দের সঙ্গেও জিততে পারেনি। সেটাও রিভার সমর্থকদের কাছে ছিল একরকম ‘ঈশ্বরের উপহার’।

কিন্তু ফুটবল ভাগ্য নিয়ে খেলা হয় না। একদিকে যেমন প্রতিপক্ষ ইন্টার মিলান দারুণ খেলেছে, অন্যদিকে রিভার হার মেনেছে আত্মনিয়ন্ত্রণহীনতায়। এখন বোকা-রিভার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীই একই ফ্লাইটে বুয়েনস আইরেসে ফিরছে।

বোকার ব্যর্থতা যেন আগেই অনুমেয় ছিল। ক্লাবটা অনেক দিন ধরেই পথহারা। প্রেসিডেন্ট হুয়ান রোমান রিকেলমে টুর্নামেন্টের ঠিক আগে অভিজ্ঞ কোচ মিগুয়েল রুসোকে ফেরান। অনেকের চোখে সেটা ছিল শুধুই আবেগের বশে নেওয়া সিদ্ধান্ত, বাস্তবতা বিবর্জিত।

রিভার তুলনামূলকভাবে ভালো দল। দ্বিতীয় ম্যাচে মেক্সিকান ক্লাব মন্তেরেকে হারানোর ভালো সুযোগ ছিল, দুর্ভাগ্যবশত সেবাস্তিয়ান দ্রিউসি ইনজুরিতে ছিটকে যান। কোচ গায়ার্দো সেই পুরোনো কৌশলী, যিনি রিভারকে ভেতর থেকে পাল্টে দিয়েছিলেন তার প্রথম মেয়াদে।

তবুও প্রশ্ন উঠছে: রিয়াল মাদ্রিদে যাওয়া তরুণ প্রতিভা ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুওনোর জায়গা কে নেবে? মাঝমাঠের তিন মূল খেলোয়াড় নিষিদ্ধ না হলে কি ফল অন্যরকম হতো? গায়ার্দোর ভেতরে আগের সেই ক্ষুধা কি এখনো আছে?

এটা শুধু দুই ক্লাবের প্রশ্ন নয়, পুরো আর্জেন্টাইন ফুটবলেরও আয়না। এই যখন আর্জেন্টিনার অবস্থা, তখন ব্রাজিলের চারটি ক্লাবই উঠে গেছে শেষ ষোলোতে। দক্ষিণ আমেরিকায় শক্তির ভারসাম্য যে ব্রাজিলের দিকে হেলে পড়েছে, সেটা দিনে দিনে স্পষ্ট হচ্ছে।

গত ছয় বছরে কোপা লিবার্তাদোরেস জিতেছে কেবল ব্রাজিলিয়ান ক্লাব। এর মধ্যে চারবার ফাইনাল হয়েছে দুই ব্রাজিলিয়ান দলের মাঝে। অথচ ইতিহাস বলবে—বোকা-রিভারের মতো ঐতিহ্য কোনো ক্লাবের নেই। কিন্তু ইতিহাস দিয়ে বর্তমানকে চালানো যায় না।

আর্জেন্টিনার দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সংকট ক্লাবগুলোর উপর চাপ ফেলেছে। বিপরীতে, ব্রাজিলিয়ান ক্লাবগুলো স্পনসরশিপ, সম্প্রচার স্বত্ব এবং পেশাদার ব্যবস্থাপনায় অনেক এগিয়ে গেছে। সেখানে আর্জেন্টিনার অনেক ক্লাবে এখনও মূল নিয়ন্ত্রণ থাকে সমর্থক গোষ্ঠীর হাতে, যারা প্রভাব খাটায় দল গঠনে, এমনকি কোচ নিয়োগেও।

তবে আলোটাও পুরো নিভে যায়নি। রেসিং ক্লাবের মতো দল এখনো চমক দেখায়। জাতীয় দল তো বিশ্বসেরা—বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টিনা তো গর্বের নামই।

তবুও, এই ক্লাব বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স রিভার-বোকার জন্য একটি সতর্কবার্তা। গ্যালারির গর্জন যতই তীব্র হোক না কেন, মাঠের বাস্তবতা অনেক কঠিন। ব্রাজিল ইউরোপের সঙ্গে ব্যবধান কমাচ্ছে, আর আর্জেন্টিনার দুই জায়ান্ট সেটাকে যেন গভীর খাদ বানিয়ে তুলছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ ক্যাটাগরির আরো নিউজ
© All rights reserved © 2014 banglarsangbadprotidin.com